আঁখো মে তেরি আজব সি... আজব সি অদায়ে হ্যায়"
মোবাইলের রি্ংটোনে ঘুম ভাঙোল আকাশের। হাসপাতালর র্মগের কর্মী আকাশ হাসপাতালের পিছনে কোয়ার্টারে থাকে। স্ত্রী রিনা গৃহকত্রী।
"কার ফোন গো" -- রিনা
"হাসপাতালের ম্যডামের। দশটার মধ্যে বেরোতে হবে। "---আকাশ
"কেন? কিছু হয়েছে? " অবাক চোখে জিজ্ঞাসা করে রিনা
"ম্যাডাম বললেন ভি আই পি র কেস আছে" --আকাশ জানায়।
সকাল দশটা। হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ। হাসপাতালের ম্যাডাম তাঁকে জরুরি তলব করেছেন ময়না তদন্তের জন্য।
চল্লিশোর্ধ আকাশ ১০ বছর ধরে এই র্মগে কাজ করছে। দীর্ঘদিনের কর্ম জীবনে অসংখ্য দেহের ময়না তদন্ত করে ফেলেছে সে। তাই নিথর দেহগুলোর উপর ছুরি কাঁচি চালাতে আর হাত কাঁপে না। মৃত্যু যেভাবেই হোক না কেন, সব দেহই যেন এক। তবে কিছু কিছু ঘটনায় মৃত্যুর বিভীষিকায় খনিকের কষ্ট হয়। গত বছর পূর্ব রেলের সদর দফতরে আগুনে পুড়ে কাঠকয়লার মতো হয়ে যাওয়া বারোটি দেহের সারা রাত ধরে ময়না তদন্ত করার সময় সেরকম অনুভূতি হয়ে ছিল তাঁর।
কিছু সময়ের মধ্যে একটা শববাহী গাড়ি এসে দাঁড়ালো হাসপাতাল চত্বরে। নিয়ম অনুযায়ী
গাড়ি থেকে দেহে নামিয়ে তা সরাসরি ব্যবচ্ছেদ এর ঘরে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিল আকাশ। সব প্রস্তুতি শেষ এখন দেহ নিয়ে গিয়ে টেবিলে শুইয়ে কাজ শুরু করার পালা। কিন্তু একি... নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না সে। এতো তাঁর প্রিয় গায়কের নিথর দেহ। গায়কের হাত ধরে টেবিলে শোয়তে গিয়েই গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল তাঁর। ময়না তদন্তের জন্য প্রস্তুত হয়েও থমকে গিয়ে ছিল কিছুটা সময়।
গত কাল স্টেজ পারফরম্যান্স শেষে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন গায়ক, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় তাঁর। নিয়মানুযায়ী কার দেহের ময়না তদন্ত হবে তা জানানো হয়না ওই ময়না তদন্তে সহকারীদের। ডিউটিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁরা তা জানতে পারেন। তাই বিস্ময় যেন কিছুতেই কাট ছিল না। মনে হচ্ছিল উনি যেন ঘুমাচ্ছেন।
সকালে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে এক ঝলক খবরটা দেখে ছিল সে।
স্বনামধন্য গায়ক কোলকাতায় শো করতে এসে মৃত। "ভাবতেই পারছি না, এটা কি সত্যি" মনে মনে বলল সে.. অন্য অনেকর মতো ওঁর ও স্বপ্ন ছিল তাঁকে দেখার । সুযোগ ছিল না। আজ সকালে যখন সেই সুযোগ এল, তখন ময়না তদন্তের ঘরে টেবিলের উপর শুয়ে আছেন প্রিয় গায়ক। যাঁকে স্পর্শ করার বিস্ময়ের পরে নিথর দেহ ব্যবচ্ছেদের জন্য ছুরি কাঁচি এগিয়ে দিতে গিয়ে হাত কেঁপে গিয়ে ছিল। এক সময় বন্ধুদের সঙ্গে কলেজ কেন্টিনে আড্ডা দেওয়া আকাশের কাছে তাঁর সবকটা গানই যে খুব প্রিয়।
অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে।
"আকাশ"..... সহকরমী ডাকলেন।
"হুম.. শুরু করছি"। -
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা ময়না তদন্তের গোটা প্রক্রিয়া শেষ করার পর শিল্পী র দেহ সেলাই করেন আকাশ ও তাঁর সহকরমীরা। স্নান করিয়ে গায়ককে পরিপাটি করে হাসপাতালেরই দুটি সাদা চাদরে মুড়ে কফিনে শুইয়ে পুলিশের শববাহী গাড়িতে তুলে দেন তাঁরা।
বাড়ি ফেরার পরে পরিজন, বন্ধুদের প্রশ্ন ছিল, "কী দেখলি? কী হয়েছিল? "
রাতে স্ত্রী মোবাইলে চালিয়ে ছিলেন 'তুহি মেরি সব হ্যায়'। তাঁকে থামতে বলেছিলেন আকাশ, বললেন,, " চোখের সামনে বার বার টেবিলে শোয়ানো মুখটা ভেসে উঠছিল"। মনে মনে বললেন
" হম রহে ইয়া না রহে কাল " স্যার আপনি থাকবেন আপনার গানে।
Comments
Post a Comment